৮ হাজার ৬০০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটিমাত্র রানওয়ে দিয়েই পরিচালিত হচ্ছে যশোর বিমানবন্দর। এ বিমানবন্দরে প্রতিদিন গড়ে ওঠানামা করে আট-নয়টি যাত্রীবাহী ও কার্গো উড়োজাহাজ। কিন্তু বিটুমিনাস কার্পেটিং বা পিচ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কমে গেছে এ বিমানবন্দরের রানওয়ের স্ট্রেংথ বা ধারণক্ষমতা। আবার ফুরিয়েছে এসব কার্পেটিংয়ের আয়ুষ্কালও। ফলে যশোর বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ পরিবহনের সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব নয় বলে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে উপস্থাপিত একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
কক্সবাজার থেকে নিয়মিত চিংড়ি পোনা পরিবহনের স্বার্থে প্রয়োজনীয়সংখ্যক কার্গো বিমানের ফ্লাইট চালু রাখতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের সুপারিশ করে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। সেই সুপারিশের ভিত্তিতে সিভিল এভিয়েশন অথরিটি একটি প্রতিবেদন সংসদীয় কমিটির বৈঠকে উপস্থাপন করে। তাতে বলা হয়, বর্তমানে যশোর বিমানবন্দরে রানওয়ের ‘স্ট্রেংথ’ অনেক কমে গেছে। রানওয়ের ধারণক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য যশোর বিমানবন্দর, সৈয়দপুর বিমানবন্দর ও শাহ মখদুম বিমানবন্দরের সারফেসে ‘অ্যাসফল্ট কংক্রিট ওভারলেকরণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। সেই প্রকল্পের আওতায় ঠিকাদার নিয়োগের ক্রয় প্রস্তাব সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
সংসদীয় কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এক্সপার্ট টিম যশোর বিমানবন্দরে রানওয়ের বর্তমান অবস্থা পরিদর্শন শেষে একটি প্রতিবেদন দেয়। প্রতিবেদনে সপ্তাহে অতিরিক্ত দুটি ফ্লাইটের অনুমোদন দেন বিশেষজ্ঞরা। প্রতিবেদনে বলা হয়, রানওয়ের অবস্থা বিবেচনা করে এক্সপার্ট টিমের সুপারিশের আলোকে জানমালের সুরক্ষার সেফটি স্ট্যান্ডার্ড বজায় রেখে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
যশোর বিমানবন্দরে প্রয়োজনীয়সংখ্যক কার্গো বিমান চালু রাখতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়টি নিয়ে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে কথা বলেন কমিটির সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক। তিনি বলেন, কক্সবাজার অঞ্চলে উৎপাদিত চিংড়ি পোনা কার্গো বিমানে করে যশোরসহ বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলে পাঠানো হয়। কিন্তু বর্তমানে কার্গো বিমানের ফ্লাইটের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ায় চিংড়ি পোনা পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে। তিনি কক্সবাজার থেকে নিয়মিত পোনা বহনের স্বার্থে এয়ারক্রাফটটিকে সচল রাখার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করেন।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, যশোর, সৈয়দপুর, শাহ মখদুম বিমানবন্দরের রানওয়ের সারফেস অ্যাসফল্ট কংক্রিট ওভারলেকরণ করতে একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে রানওয়েতে নিরাপদে উড়োজাহাজের ওঠানামা নিশ্চিত করা হবে। প্রকল্পের আওতায় যশোরে ২৮০, সৈয়দপুরে ২১০ ও শাহ মখদুম বিমানবন্দরে ২৭০ মিলিমিটার পুরুত্বে অ্যাসফল্ট কংক্রিট ওভারলে করা হবে। বিমানবন্দরগুলোর এয়ারফিল্ড গ্রাউন্ড লাইটিং (এজিএল) সিস্টেমের আপগ্রেডেশন, রানওয়ে সাইড-স্ট্রিপসহ ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং প্রতিটি বিমানবন্দরের জন্য পর্যাপ্ত ধারণক্ষমতাসম্পন্ন একটি করে আধুনিক অগ্নিনির্বাপক গাড়ি কেনা হবে। ‘যশোর বিমানবন্দর, সৈয়দপুর বিমানবন্দর ও রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দরের রানওয়ে সারফেসে অ্যাসফল্ট উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় তিনটি বিমানবন্দরের রানওয়ের পাশাপাশি টার্মিনালও উন্নয়ন করা হবে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, যশোর, সৈয়দপুর ও শাহ মখদুম বিমানবন্দর অধিক পুরনো। ফলে রানওয়ের বিটুমিনাস কার্পেটিংয়ের আয়ু শেষ হয়ে গেছে। রানওয়ের সারফেস থেকে নুড়িপাথর উঠে আসাসহ নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। বিমানবন্দরগুলো অধিকসংখ্যক উড়োজাহাজের ক্রমাগত চাপ বহন উপযোগী হয়ে নির্মিত নয়। এসব বিবেচনায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
১৯৪১ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যশোর বিমানবন্দর নির্মিত হয়। দেশের সবচেয়ে পুরনো বিমানবন্দর এটি। এমনকি দেশের একমাত্র বিমান প্রশিক্ষণকেন্দ্রও এটি। যশোরে অনেক পরিমাণে সবজি উৎপাদিত হয়। যশোর থেকে প্রতিদিন কয়েক ট্রাক সবজি ঢাকায় পাঠানো হয়। পরবর্তী সময়ে ঢাকা থেকে এসব সবজির কিছু অংশ বিদেশে রফতানি করা হয়। যশোর বিমানবন্দর উন্নত হলে এখান থেকে বিদেশে কার্গো বিমান পাঠানো সম্ভব হবে। তাতে সবজির পাশাপাশি যশোরে উৎপাদিত উন্নতমানের ফুল বিদেশে সহজে রফতানি করা সহজ হবে। ফলে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে আরো বেশি লাভবান হবেন।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।